প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লাগাতার জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের ৩০ সদস্যদের এক প্রতিনিধি দল।
সীমান্ত নগরী টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে অবস্থিত রেজিষ্ট্রাট-আনরেজিষ্ট্রাট দুই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া ৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে এসেছে বিভিন্ন প্রকার ত্রান সামগ্রী। ১৫ ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকাল ৩টায় টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলমের সহযোগীতায় মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দল লেদা রোহিঙ্গা বস্তির ৫০ পরিবারের মধ্যে তাদের নিয়ে আসা ত্রান সামগ্রী গুলো শরণার্থীদের মাঝে বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের দেওয়া ত্রান সামগ্রী বিতরণ করার সময় নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীরা আনন্দ উল্লাসে মেঠে উঠে। তার পাশাপাশি মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে বিস্কুট, চকলেট বিতরণ করে।
সুত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সকাল ১১টায় উখিয়া কুতুপালং, বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি গুলোতে এই ত্রান সামগ্রী গুলো বিতরণ করার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি “নটিক্যাল আলিয়া” নামের একটি জাহাজ এক হাজার ৪৭২ টন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ত্রান বাহি নটিক্যাল আলিয়া নামে এই জাহাজটি চট্রগ্রাম বন্দরে এসে পৌছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি জেটিতে পৌঁছালে জাহাজ থেকে ত্রাণগুলো খালাস করা হয়। এর পর গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ৮টার দিকে এই জাহাজ থেকে ত্রাণ সামগ্রী গুলো নিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দল। এই ত্রাণ গুলো সঠিক ভাবে বিতরণ করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ এর নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সুত্রে আরো জানা যায়, কক্সবাজার জেলার প্রায় ১৫ হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে মালয়েশিয়া থেকে নিয়ে আসা এই ত্রান গুলো বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া ত্রান গুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, কফি, চিনি, খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, কম্বল ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ প্রায় ৩৫ প্রকার পণ্য।
এসময় প্রতিনিধি দলের প্রধান আব্দুল আজিজ উপস্থিত দেশী, বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেওয়া সহ নানান ধরনের সহযোগীতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। প্রয়োজনে আরও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে সফররত মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের প্রধান আব্দুল আজিজ মত প্রকাশ করেন। উক্ত ত্রাণসামগ্রীগুলো ধারাবাহিকভাবে বিতরণ করবেন আওএম ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতিধিরা। একটি তালিকা করে টিকিটের মাধ্যমে চারটি ¯পটে পর্যায়ক্রমে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে এগুলো বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার টেকনাফে এবং সাড়ে ৯ হাজার পরিবার উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী বস্তিতে। এদিকে ত্রাণ বিতরণের জন্য দুটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান করে উপজেলা পর্যায়ে অন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
পাঠকের মতামত: